রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ ২৪ : রাজধানী ঢাকার পুরারা পল্টনে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় পুলিশী তদন্ত ও আদালতে এক আসামীর স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দিতে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের ছেলে গোলাম মোঃ কাউসার ওরফে রিফাতের নাম উঠে আসায় এর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত সংবাদ সম্মেলনে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং প্রকৃত অপরাধীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়।
শনিবার (২১ মে) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ওই সংসদ সম্মেলনে গিয়াসপন্থি হিসেবে পরিচিতি নারায়ণগঞ্জ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের সাবেক নেতাদের একটি অংশ উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকার পুরানা পল্টনে গত ২৫ এপ্রিল রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে উপর্যপুরি ছুরিকাঘাতে হত্যা চেষ্টা চালানো হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্তে বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিনের ছেলে রিফাতের নামে উঠে আসে। মামুন মাহমুদকে ছুরিকাঘাত করে পালানোর সময় স্থানীয়দের হাতে জুয়েল মীর ওরফে পাগলা জুয়েল নামে বিএনপির এক কর্মী আটক হয়। পরে পুলিশের হেফাজতে জুয়েল ঘটনার মাষ্টারমাইন্ড হিসেবে নারায়ণগঞ্জের হৃদয় ও রিফাতের নাম জানিয়ে মোট ৩ জনের নাম প্রকাশ করে। জুয়েলের স্বীকারোক্তি মোতাবেক পল্টন মডেল থানা পুলিশ নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের সহায়তায় সাবেক সংসদ সদস্য গিয়াস উদ্দিনের সিদ্ধিরগঞ্জের বাড়িতে গত ২৮ এপ্রিল রাতে অভিযান চালায়। তবে অভিযান টের পেয়ে গিয়াস উদ্দিন ও তার ছেলেরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এরপর থেকে গিয়াস উদ্দিন ও তার ছেলেরা পলাতক রয়েছেন। আর ঘটনার পরদিন মামুন মাহমুদকে ঢাকা মেডিকেলে দেখতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি সাগর সিদ্দিকী। জুয়েলের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী সাগর সিদ্দিকী মামুন মাহমুদের ছবি ও তার অফিস জুয়েলকে দেখিয়ে দেয়।
গত ৩০ এপ্রিল গ্রেপ্তার জুয়েল ঢাকার মেট্টেপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে। সেখানে সে ঘটনার মাস্টার মাইন্ড হিসেবে নারায়ণগঞ্জের হৃদয় ও রিফাতের নাম উল্লেখ করেন। আর মামুদ মাহমুদের ছবি ও অফিস চিনিয়ে দেয় সাগর সিদ্দিকী। তাছাড়া ঘটনার দিন ২৫ এপ্রিল রাতে মামুন মাহমুদকে ছুরি মারার আগে ঘটনাস্থলের অদূরে ছিলেন হৃদয় ও রিফাত।
সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিনের ছেলের ডাক নামও রিফাত। কিন্তু এই রিফাত সেই রিফাত নয়। তাহলে পুলিশ কেন গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে অভিযান চালালো এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতারা বলেন, নামের মিল থাকায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। এত বড় একটি ঘটনায় পুলিশ নিশ্চিত না হয়েই অভিযান চালালো কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতারা বলেন, তৃতীয় একটি পক্ষ এখানে পেছন থেকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ষড়যন্ত্র করছে। সে কারণেই গিয়াস উদ্দিন ও তার পরিবারকে এ ঘটনায় জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে বিভেদ সৃষ্টিকারী হিসেবে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ও হামলার শিকার মামুন মাহমুদকে দায়ি করা হয়। মামুন মাহমুদ জেলার দায়িত্ব পাওয়ার পর গিয়াসপন্থিদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়াসহ নানা অভিযোগ তোলেন সংবাদ সম্মেলনকারীরা। একারণে তার সঙ্গে মতভেদ বা মতানৈক্য রয়েছে বলেও তারা স্বীকার করেন। তবে একারণে তাকে হত্যা চেষ্টার সঙ্গে কোন ভাবেই গিয়াস উদ্দিন ও তার ছেলে জড়িত নয় বলে দাবি করা হয়। মামুন মাহমুদকে হত্যা চেষ্টার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় গিয়াস উদ্দিন বা তার ছেলে রিফাতের নাম উল্লেখ করা হয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনকারীরা না সূঁচক উত্তর দেন। তাহলে কিভাবে ষড়যন্ত্র হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, এ ঘটনার পর পেছন থেকে তৃতীয় পক্ষ বা সরকার দলীয় কেউ খেলছেন বলে জানানো হয়।।
সংবাদ সম্মেলনকারীরা দলের মধ্যে মূল বিভেদ সৃষ্টিকারী হিসেবে মামুন মাহমুদকে দায়ি করেছেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংবাদ সম্মেলনে তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন আমি গিয়াস উদ্দিনের সঙ্গে যারা রাজনীতি করেন তাদের দলের কোন কমিটিতে রাখবো না বলে ঘোষণা দিয়েছি। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি ছিলেন আবদুল হাই রাজু। আমিই তাকে আবারো থানার আহবায়কের দায়িত্ব দিয়েছি। রাজু গিয়াস উদ্দিনের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত। সেই সঙ্গে আবদুল হালিম জুয়েল জেলা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার বিএনপির সদস্য। তিনিও গিয়াস উদ্দিনের ঘনিষ্ট হিসেবে পরিচিত এবং শনিবার অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। এরকম আরও অনেক নেতা রয়েছেন যারা গিয়াস উদ্দিনের ঘনিষ্ঠ এবং আমি তাদের কমিটিতে রেখেছি। সুতরাং তাদের বক্তব্য বা দাবি কোন ভাবেই সত্য নয়।
এ সময় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, জেলা বিএনপির সাবেক নেতা অ্যাডভোকেট আবদুল বারী ভূঁইয়া। উপস্থিত ছিলেন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার মনিরুল ইসলাম, শ্রমিক দলের সাবেক নেতা নাজির আহমেদ নজির, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাবেক নেতা আলাউদ্দিন খন্দকার শিপন, আবদুল হালিম জুয়েল, জুলহাস হোসেন খান, শ্যামল সরকার, মঈনুল হোসেন রতন, বিল্লাল হোসেন সহ প্রমুখ।
Leave a Reply