রিপোর্ট নারায়ণগঞ্জ ২৪ : রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় কারখানার ভেতর থেকে এ পর্যন্ত ৫১ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হযয়েছে। তবে এ সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এর মধ্যে অধিকাংশই পোড়া ছিল লাশগুলো। চেনার উপায় নেই। লাশগুলো ফায়ার সার্ভিসের চারটি অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুরে কারখানার পোড়া ধ্বংসস্তুুপ থেকে আরো ৫১টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
রূপগঞ্জের জুস কারখানায় অগ্নিকান্ডের প্রায় ২২ ঘন্টা পর এক এক করে লাশ বের করা হচ্ছে। দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এ সংখ্যা দাড়ায় ৫১ জনে। চলমান রয়েছে উদ্ধার কাজ। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ভুলতা কর্ণগোপ এলাকায় সেজান জুসের কারখানার আগুনের হতাহতের এ তথ্য নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) দেবাশীষ বর্ধন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকালে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত, শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তা নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারায় এ নিয়ে স্থানীয়দের সাথে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, টিয়ারশেল নিক্ষেপের ঘটনাও ঘটেছে।আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট। ডেমরা, কাঞ্চন, আড়াইহাজার ও নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পঞ্চম তলায় আগুন জ্বলছিল।
ভয়াবহ এ অগ্নিকান্ডের ঘটনার বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ৩জন নিহত ও অর্ধ শতাধিক আহতের খবর পাওয়া যায়। শুক্রবার আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রনে আসার পর শুরু হয় কারখানার ভিতরে উদ্ধার কাজ, তাতে ৫১ শ্রমিকের পোড়া দেহ উদ্ধার করা হয়েছে, এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত। অগ্নিকান্ডের ৭ তলা ভবনটির এখনো ৪,৫ সহ অন্যান্য তলায় তল্লাশী বাকি রয়েছে। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে মৃত্যুর সারি আরো দীর্ঘ হতে পারে।
অগ্নিকান্ডের কারণ উদঘাটনে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম বেপারীকে আহবায়ক করে পাচঁ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে আছেন রূপগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা, ফায়ার সার্ভিসের জেলা উপ-সহকারি পরিচালক, পুলিশের একজন প্রতিনিধি এবং কলকারখানা অধিদপ্তরের জেলার একজন কর্মকর্তা। সাতদিনের মধ্যে এ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
শুক্রবার সকাল থেকে কারখানার সামনে হতাহতের স্বজনদের আহাজারি করতে দেখা গেছে। অনেক শ্রমিক এখনও ভবনের ভেতরে আটকা রয়েছেন বলে জানিয়েছিলেন শ্রমিক ও নিখোঁজের স্বজনরা। সকাল থেকে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ, জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানসহ প্রশানের শীর্ষ কর্মকর্তাগণ ঘটনাস্থলে অবস্থান করেন। বৃহস্পতিবার নিহতরা হলেন, স্বপ্না আক্তার (৪৫), মীনা আক্তার (৪১) ও মোরসালিন (২৮)।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহ্ নুসরাত জাহান জানান, লাশ উদ্ধার করে এম্বুল্যান্সে তোলা হচ্ছে। এখনো পুরো কাজ শেষ হতে সময় লাগবে। ফায়ার সার্ভিসে অফিসিয়াল ভাবে আরও পরে ব্রিফ করতে পারবো। আমরা নিখোঁজদের ও নিহতদের তালিকা তৈরী করছি।
স্বজনরা অভিযোগ করে জানান, কর্তৃপক্ষের অবহেলায় কারখানায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। কারখানায় আগুন লাগার পরও কর্তৃপক্ষ কেচি গেটের তালা না খোলায় শ্রমিকরা বের হতে পারেননি।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, আগুনের ঘটনায় কত জন নিখোঁজ আছেন, তার একটি তালিকা প্রস্তুুত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাজ চলছে। স্বজনদের তথ্য অনুযায়ি নিখোঁজদের নাম তালিকায় লিপিবদ্ধ করা হবে। একই সাথে যারা ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদেরও একটি তালিকা করা হচ্ছে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন জানান, আগুন নিয়ন্ত্রনে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট এখনো একযোগে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কারখানাটির আশপাশে পানির ব্যবস্থা কম থাকায় একদিকে আগুন নিয়েন্ত্রনে আনা হলেও আরেক দিকে আগুন লেগে যাচ্ছে। তবে আগুন এখন পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রনে আছে। ভেতরে ডাম্পিংয়ের কাজ চলছে। কারখানটির উপরের ফ্লোরগুলোতে প্লাটিকসহ দাহ্য পদার্থ থাকায় বার বার আগুন জ্বলে উঠছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রনে আসার পর ভেতরে কেউ আটকা পড়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে পুরো ভবনটি তল্লাশি করা হবে।
Leave a Reply